উড়ছে কোটচাঁদপুরের স্কুল শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান অঙ্কনের তৈরি প্লেনটি। যা দেখে খুশি সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা। এদিকে প্লেনটি সফল ভাবে আকাশে উড়ায় প্রশংসায় ভাসছেন ওই শিক্ষার্থীও। সরকারি সহায়তা পেলে ভাল কিছু করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি। এ খবর জানার পর সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল।
জানা যায়,সাকিব আল হাসান অঙ্কন ( ১৬)। সে কোটচাঁদপুর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শওকত আলীর ছেলে। এ বছর অঙ্গন কোটচাঁদপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল গ্রুপ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।দুই ভাইয়ের মধ্যে অঙ্কন বড়। সে ছোট বেলা থেকেই ম্যাকানিকাল কাজের দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন। তারই বহির প্রকাশ আজ তাঁর তৈরি প্লেন আকাশে উড়ছে। যা দেখে খুশি প্রতিবেশী স্বজন আর এলাকাবাসী। অন্যদিকে তার তৈরি প্লেন আকাশে উড়ায় প্রশংসায় ভাসছেন অঙ্কন ও।
সেই সফল হওয়ার গল্প এ প্রতিবেদকে বলেন সাকিব আল হাসান অঙ্কন। ছোট বেলা থেকেই ইলেকট্রনিকস কাজ করতে আমার ভাল লাগত। সে থেকে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে কাজের যন্ত্রাংশ কিনতাম। এরপর ইউটিউবে ড্রোন দেখে তা তৈরি করতে মন চাইল। কিনতে শুরু করলাম ড্রোন তৈরির সরঞ্জাম। কাজ শুরু করলাম ড্রোন তৈরির। একে একে দুইটি ড্রোন তৈরি করেছিলাম ২০২৪ সালে। এরপর সেই ড্রোন আকাশে উড়িয়ে সফলও হয়েছিলাম । ওই ড্রোন তৈরি করতে সব মিলিয়ে আমার ৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। যার পুরো সাপোর্ট পেয়েছিলাম আমার পিতার কাছ থেকে । এরপর এসএস সি পরিক্ষা নিয়ে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে মাথায় ছিল প্লেন তৈরি করতে হবে। সেটা নিয়ে মাঝে মধ্যে কাজও করতাম। এরপর পরিক্ষা শেষে গেল ৪ মাস প্রতিদিন ৪/৬ ঘন্টা কাজ করে প্লেনটি তৈরি সম্পন্ন করেছি। যা ইতোমধ্যে আমাদের গ্রামের স্কুল মাঠের আকাশ উড়িয়েছি । সে দিনই এলাকাবাসী অনেক খুশি হয়েছিল প্লেনটি আকাশে উড়তে দেখে। আজ দ্বিতীয় বারের মত প্লেনটি উড়ানো হল।
প্লেনটি তৈরি করতে গিয়ে আমি বেশ কয়েকবার ব্যর্থও হয়েছি। তবে সর্বশেষ চ্যাট জিপিটির সহায়তা নিয়ে আমি সফল হয়েছি।
প্লেন তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে অঙ্কন বলেন,ড্রোন তৈরির আগের মটর কাজে লাগানো হয় প্লেন তৈরিতে,কন্টোলের জন্য ব্যবহার করা হয় ড্রোনের ফ্লাই স্কাই,এফএস- (১৬,)। ব্যবহার করা হয়েছে ৪ টি সার্ভো মটর, ককসিট, যা দিয়ে বডি তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে ১৪ কেবি ব্লাস লেস মটর,৮ ইঞ্চি পপুলার, পিএসসি ২ টা, রিসিভার আই-৬, ২২ এমপি আরের লিকো ব্যাটারি, হার্ডবোড, এসএসপাইপ, বার্বিজ জুতার হুইল,পিবিসি ট্যাব।
ওই শিক্ষার্থী বলেন,প্লেন তৈরিতে আমার ড্রোনের থেকে কম খরচ হয়েছে। কারন ড্রোন তৈরির সেই সব সরঞ্জাম খুলে আমি প্লেন তৈরির কাজে লাগিয়েছি।সাকিব আল হাসান বলেন,এ পর্যন্ত আমার যা ব্যয় হয়েছে, তাঁর সব সহযোগিতা আমার পিতা করেছেন। তবে বড় আকারে বানিজ্যিক ভাবে যদি প্লেন বা ড্রোন তৈরি করতে হয়,সে ক্ষেত্রে অনেক ব্যয় বহুল হবে কাজটি করতে। যা আমার ও আমার পরিবারের পক্ষে কোন রকম সম্ভব না। এ কারনে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। আর সরকারি সহায়তা পেলে ভাল কিছু করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
অঙ্কনের পিতা পল্লী চিকিৎসক শওকত আলী বলেন,অঙ্কন এ বছর কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে এখনও ফল প্রকাশ হয়নি। তিনি বলেন, সে ছোট বেলা থেকে ম্যাকানিক্যাল কাজের দিকে বেশি মনোযোগী। সে অনুযায়ী এসএসসিতে অঙ্কন ভোকেশনাল বিভাগের ইলেকট্রিকাল নিয়ে লেখা পড়া করেছেন। তবে সে লেখা পড়ার পাশাপাশি ওই সব কাজের পিছনে দিনের একটা সময় দিতেন। এরপর ২০২৪ সালের দিকে দেখতে পায় একটা ড্রোন বানিয়ে উড়াতে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ওই সময় একটু রাগও করেছিলাম। তবে সে তাঁর কাজ বন্ধ করেনি। এসএসসি পরীক্ষা পর আবারও মনোনিবেশ করেন তাঁর কাজে। গেল ১০/১২ দিন হল দেখতে পায় তাঁর হাতে প্লেন। যা সে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার আকাশে উড়িয়ে সফলও হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন,আজ পর্যন্ত আমার ছেলে যা কিছু করেছে,তা নিজের প্রচেস্টায় করেছেন। আমি তেমন কোন সহযোগিতা করতে পারেনি। আমি সামনের দিনে সরকারের সহায়তা কামনা করছি। যাতে করে সে ভাল কিছু করে সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারেন।
ট্র্যাক্টর ড্রাইভার কলম হোসেন বলেন,আমি মাঠে ট্র্যাক্টর দিয়ে চাষ করছিলাম। হঠাৎ মাথার উপর দেখতে পায় প্লেনের মত কিছু উড়ছে। এরপর দেখতে পায় রাস্তার পাশে মানুষের ভীড়। তারাও ওই প্লেন উড়া দেখতে এসেছেন। পরে খোজ নিয়ে জানতে পেলাম,বলরামপুর গ্রামের শওকত ডাক্তারের ছেলে অঙ্কন ওই প্লেন বানিয়েছে। প্লেন বানানোর কথা জানতে পেরে খুব ভাল লাগছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন,বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরে ভাল লাগছে। আরো ভাল লাগছে সে যে অল্প বয়সে তাঁর মেধা দিয়ে ড্রোন, প্লেনসহ একাধিক জিনিসপত্র বানিয়েছেন এটা জেনে।তিনি বলেন,আপনারা আমাকে ওই ছেলের সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। এরপর আমি তাঁর বিষয়টি নিয়ে যেখানে যেখানে কথা বলতে হয় বলব। এ ছাড়া তাঁর মেধা কাজে লাগিয়ে আর কি করা যায়। সেটা নিয়েও কাজ করা হবে।