ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী, মধুহাটী, গান্না, কুমড়াবাড়িয়া ও মহারাজপুর ইউনিয়নের অন্তত ৬০টি গ্রামের প্রায় ১১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিএডিসির খাল খনন না করা এবং নির্বিচারে পুকুর খননের ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে আমন মৌসুমের শুরুতেই বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক।
স্থানীয়রা জানান, একটানা বৃষ্টির পানি জমে চাষাবাদের উপযোগী জমিগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। বিশেষ করে বংকিরা, মামুনশিয়া ও পয়াদপুর এলাকার খালগুলো বহু বছর ধরে খনন না করায় পানি আটকে আছে। কাজলের খাল, মামুনশিয়া খাল ও পয়াদপুর খাল কচুরিপানায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি চিত্রা নদীতে পৌঁছাতে পারছে না। এতে এসব এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমিতে ধানের চারাও নষ্ট হয়ে গেছে।
বংকিরা গ্রামের কৃষক আদম আলী বলেন, প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। অনেকবার অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি।
রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের কৃষক শাজাহান জানান, ১০ গ্রামের পানি কাজলের খাল হয়ে ভেদড়ি বিল, মামুনশিয়া ও পয়াদপুর খাল পেরিয়ে চিত্রা নদীতে যেত। এখন খালগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি জমে আছে।
এ বিষয়ে সাধুহাটী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম মনসাদ বলেন, বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে খাল খননের জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
এদিকে কুমড়াবাড়িয়া, গান্না ও মহারাজপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া হুমোদার বিল সংলগ্ন প্রায় ১০০ হেক্টর জমিও জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী বলছে, অদক্ষ পরিকল্পনায় পুকুর খনন এবং খালের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই বিলের পানি জমে থেকে যাচ্ছে।
গান্না ইউনিয়নের কৃষক ছমির বিশ্বাস জানান, আমন ধান আগাম রোপণ করেছিলাম। এখন ৫ বিঘা জমির ধান পুরোটাই পানির নিচে।
এই প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী বলেন, অনিয়মিতভাবে পুকুর খননের সময় পানিপ্রবাহের পথ না রেখে বিল ও খালের গতিপথ রুদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণেই মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝিনাইদহ বিএডিসির (সেচ) সহকারী প্রকৌশলী সৌরভ কুমার বিশ্বাস জানান, কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং মাঠের অবস্থা দেখে একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠিয়েছেন। তিনি জানান, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে খাল খননের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।