Hi

ঢাকা ০২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ড্রাগনের রাজধানী গৌরীনাথপুর: প্রতিদিন ১০ কোটির বেচাকেনা, বদলে দিচ্ছে কৃষির চিত্র |

ড্রাগন ফলের নাম শুনলেই এখন অনেকের চোখে ভেসে ওঠে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর বাজার। ‘ড্রাগনের রাজধানী’ খ্যাত এই বাজারে সকাল হলেই শুরু হয় তুমুল হাকডাক, গাঁ গর্জে ওঠে যেন ফলের সুরে। প্রতিদিন এখানে বেচাকেনা হয় ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল।

এ বাজার ঘিরে এখন জমে উঠেছে পুরোদস্তুর একটি কৃষি-অর্থনীতি। চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহ জেলার নানা প্রান্ত থেকে বিক্রেতারা প্রতিদিন ভোরেই আসেন গৌরীনাথপুরে। শুধু স্থানীয় ক্রেতারাই নন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরাও এখান থেকে ট্রাক ভর্তি করে ড্রাগন ফল কিনে নিয়ে যান রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন শহরে। বাজারে রয়েছে ৭৪টি আড়ৎ। প্রতিটি আড়তেই দিনে দিনে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে।

মাত্র এক দশক আগেও এই অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ ছিল না বললেই চলে। এখন মহেশপুরসহ আশপাশের এলাকা জুড়ে প্রায় প্রতিটি গ্রামে দেখা মেলে ড্রাগনের বাগান। কৃষকরা ধান, পাট কিংবা সবজির বদলে ঝুঁকেছেন এই লাভজনক ফল চাষে।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন,
“ড্রাগন ফলের চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বাজার ব্যবস্থাপনা এবং রপ্তানির দিকেও নজর দিচ্ছি যেন কৃষক ন্যায্যমূল্য পান।”

ড্রাগন ঘিরে জমে উঠেছে নানা ধরনের পেশা। বাগানে কাজ করা শ্রমিক থেকে শুরু করে পরিবহনকর্মী, আড়ৎদার, ঠেলা চালক—সবারই দিন চলে এখন ড্রাগনের উপর নির্ভর করে। গৌরীনাথপুর বাজারে এখন অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত এই পেশায়।

গৌরীনাথপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মালেক বলেন,
“আগে দুই একর জমিতে ধান করে যা আয় হতো, এখন এক একর জমিতেই তার দ্বিগুণ আয় হয় ড্রাগন করে। সারাবছর ফল আসে, বাজার হাতের কাছে—এই চাষে আমরা এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী।”

চাষিরা এখন আরও উন্নত জাতের ড্রাগন ফল, যেমন—হোয়াইট পাল্প, রেড ফ্লেশ ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। অনেকে আবার অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করছেন বিদেশি বাজারে রপ্তানির আশায়।

তবে সব কিছুতেই চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। ড্রাগনের জন্য নির্দিষ্ট হিমঘর, মান নিয়ন্ত্রণের ল্যাব, প্রশিক্ষিত বাগান ব্যবস্থাপক, ও সুষ্ঠু রপ্তানিনীতির অভাব এখনও টের পাওয়া যায়।

বাজারে এক আড়ৎদার মনিরুল ইসলাম বলেন,
“চাহিদা অনেক, কিন্তু অনেক সময় সংরক্ষণের অভাবে ফল নষ্ট হয়। সরকার যদি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হিমাগার করে দিত, তাহলে এখান থেকে বিদেশেও ড্রাগন রপ্তানি সম্ভব হতো।

গৌরীনাথপুর এখন শুধু একটি বাজার নয়—একটি দৃষ্টান্ত। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের সম্ভাবনার একটি নতুন গল্প।
ড্রাগন ফলকে ঘিরে এই পরিবর্তন শুধু অর্থনীতির নয়, মানুষের জীবনেরও। সময় এসেছে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ একত্র করে এই সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করার।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

কৃষককে হয়রানি ও অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

ড্রাগনের রাজধানী গৌরীনাথপুর: প্রতিদিন ১০ কোটির বেচাকেনা, বদলে দিচ্ছে কৃষির চিত্র |

আপডেট : ০২:৪৩:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

ড্রাগন ফলের নাম শুনলেই এখন অনেকের চোখে ভেসে ওঠে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর বাজার। ‘ড্রাগনের রাজধানী’ খ্যাত এই বাজারে সকাল হলেই শুরু হয় তুমুল হাকডাক, গাঁ গর্জে ওঠে যেন ফলের সুরে। প্রতিদিন এখানে বেচাকেনা হয় ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল।

এ বাজার ঘিরে এখন জমে উঠেছে পুরোদস্তুর একটি কৃষি-অর্থনীতি। চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহ জেলার নানা প্রান্ত থেকে বিক্রেতারা প্রতিদিন ভোরেই আসেন গৌরীনাথপুরে। শুধু স্থানীয় ক্রেতারাই নন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরাও এখান থেকে ট্রাক ভর্তি করে ড্রাগন ফল কিনে নিয়ে যান রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন শহরে। বাজারে রয়েছে ৭৪টি আড়ৎ। প্রতিটি আড়তেই দিনে দিনে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে।

মাত্র এক দশক আগেও এই অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ ছিল না বললেই চলে। এখন মহেশপুরসহ আশপাশের এলাকা জুড়ে প্রায় প্রতিটি গ্রামে দেখা মেলে ড্রাগনের বাগান। কৃষকরা ধান, পাট কিংবা সবজির বদলে ঝুঁকেছেন এই লাভজনক ফল চাষে।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন,
“ড্রাগন ফলের চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বাজার ব্যবস্থাপনা এবং রপ্তানির দিকেও নজর দিচ্ছি যেন কৃষক ন্যায্যমূল্য পান।”

ড্রাগন ঘিরে জমে উঠেছে নানা ধরনের পেশা। বাগানে কাজ করা শ্রমিক থেকে শুরু করে পরিবহনকর্মী, আড়ৎদার, ঠেলা চালক—সবারই দিন চলে এখন ড্রাগনের উপর নির্ভর করে। গৌরীনাথপুর বাজারে এখন অন্তত ২ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত এই পেশায়।

গৌরীনাথপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মালেক বলেন,
“আগে দুই একর জমিতে ধান করে যা আয় হতো, এখন এক একর জমিতেই তার দ্বিগুণ আয় হয় ড্রাগন করে। সারাবছর ফল আসে, বাজার হাতের কাছে—এই চাষে আমরা এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী।”

চাষিরা এখন আরও উন্নত জাতের ড্রাগন ফল, যেমন—হোয়াইট পাল্প, রেড ফ্লেশ ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। অনেকে আবার অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করছেন বিদেশি বাজারে রপ্তানির আশায়।

তবে সব কিছুতেই চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। ড্রাগনের জন্য নির্দিষ্ট হিমঘর, মান নিয়ন্ত্রণের ল্যাব, প্রশিক্ষিত বাগান ব্যবস্থাপক, ও সুষ্ঠু রপ্তানিনীতির অভাব এখনও টের পাওয়া যায়।

বাজারে এক আড়ৎদার মনিরুল ইসলাম বলেন,
“চাহিদা অনেক, কিন্তু অনেক সময় সংরক্ষণের অভাবে ফল নষ্ট হয়। সরকার যদি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হিমাগার করে দিত, তাহলে এখান থেকে বিদেশেও ড্রাগন রপ্তানি সম্ভব হতো।

গৌরীনাথপুর এখন শুধু একটি বাজার নয়—একটি দৃষ্টান্ত। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের সম্ভাবনার একটি নতুন গল্প।
ড্রাগন ফলকে ঘিরে এই পরিবর্তন শুধু অর্থনীতির নয়, মানুষের জীবনেরও। সময় এসেছে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ একত্র করে এই সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করার।