রাতের নিস্তব্ধ আকাশে যখন সব পাখি ঘুমিয়ে থাকে, তখন নিঃশব্দ ডানায় উড়ে বেড়ায় এক রহস্যময় পাখি — প্যাঁচা। তার চোখের চাহনি, নিঃশব্দ গতি এবং মাথা ঘোরানোর আশ্চর্য ক্ষমতা বহুদিন ধরেই মানুষের মনে কৌতূহল জাগিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো — এই পাখিটির নাম “প্যাঁচা” হলো কেন?
শব্দের উৎস কী?
ভাষাবিদদের মতে, বাংলা “প্যাঁচা” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “ঊলুক” বা “উল্লুক” থেকে, যার অর্থও পেঁচা। তবে সাধারণ ধারণা হলো, এই নামটির সঙ্গে পেঁচার এক বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য জড়িত।
প্যাঁচা এমন একটি পাখি, যার মাথা ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরতে পারে। ঠিক যেন “প্যাঁচানো”। এই “প্যাঁচ” শব্দ থেকেই অনেকের মতে “প্যাঁচা” শব্দটি এসেছে। অর্থাৎ, শব্দটি এদের আচরণ ও শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেই মিল রেখেছে।
লোককথা ও ধ্বনিগত রূপ
গ্রামবাংলার অনেক এলাকায় “প্যাঁ-প্যাঁ” জাতীয় ধ্বনি বা ডাক শুনে স্থানীয়রা সহজ করে এই পাখির নাম দিয়েছে “প্যাঁচা”। অন্যদিকে, শিশুকাহিনি, রূপকথা ও লোকগাথায় প্যাঁচা জ্ঞানী ও রহস্যময় চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছে। ফলে এই পাখির নাম কেবল শব্দ নয়, একধরনের ভাবধারারও প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্যাঁচা নিয়ে কুসংস্কার
অনেক অঞ্চলে এখনো বিশ্বাস রয়েছে, প্যাঁচা ডাকলে অমঙ্গল ঘটে। অথচ বাস্তবতা হলো, প্যাঁচা একেবারে নিরীহ এবং পরিবেশবান্ধব একটি পাখি। তাদের খাদ্য তালিকায় থাকে ক্ষতিকর ইঁদুর ও পোকামাকড়, যারা ফসলের জন্য হুমকি।
প্যাঁচা মানেই কৌতূহল
নামেই কৌতূহল, আচরণেও রহস্য। ‘প্যাঁচা’ শব্দটি তাই শুধুমাত্র একটি পাখির নাম নয়, বরং বাংলার লোকজ সংস্কৃতির একটি অংশ, যা আজও জ্যোৎস্না-ভরা রাতের নীরব আকাশে পাখা মেলে আমাদের ভাবায়