Hi

ঢাকা ০৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি: ইতিহাসের গর্ভে হারানো এক রাজকীয় অধ্যায়

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ১নং এস.বি.কে ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদতীরবর্তী গ্রাম সুন্দরপুর। এখানেই অবস্থিত দুই শতাব্দী প্রাচীন এক জমিদার বাড়ি—যা কেবল স্থাপত্যের গৌরব নয়, বরং দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার এক অনন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী।

ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতির ছোঁয়ায় গড়া এই রাজকীয় প্রাসাদটির দৃষ্টিনন্দন বৈঠকখানা, প্রশস্ত উঠান ও সৌকর্যমণ্ডিত কক্ষগুলোর দেয়ালে যেন জমে আছে অতীতের গৌরবগাথা।

১৮৮৬ সালে এই জমিদার বাড়িতেই জন্ম নেন খান সাহেব ফজলুর রহমান চৌধুরী। তাঁর পিতা সুরত আলি চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন অঞ্চলের সুপ্রতিষ্ঠিত জমিদার। কিন্তু ফজলুর রহমান ছিলেন ব্যতিক্রম। জমিদারী ক্ষমতাকে কেবল শাসনের জন্য নয়, উন্নয়ন, শিক্ষা ও কৃষিভিত্তিক শিল্প সম্প্রসারণে কাজে লাগান তিনি। তাঁর এই দৃষ্টান্তমূলক অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৩২ সালে ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল ‘অফ ওয়েলিংটন’ তাঁকে “খান সাহেব” উপাধিতে ভূষিত করেন।

সাম্প্রতিক ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯৪০ সালের ‘পাট বিপ্লবে’ ফজলুর রহমানের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তিনি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের পাট বীজ সরবরাহ ও সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি প্রবর্তন করে বিস্তর প্রশংসা কুড়ান।

জানা যায়, এ বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করেছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও এ কে ফজলুল হকের মতো জাতীয় নেতারাও। শাসন-সভার পথে এসে তাঁদের অবস্থানের স্মৃতিচিহ্ন আজও টিকে আছে কাছারি ঘরের ধূসর দেয়ালে।

সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি শুধু ইতিহাসের ধারক নয়, বরং আঞ্চলিক ঐতিহ্যের এক শক্তিশালী প্রতীক। আজও এই স্থাপনা ইতিহাস-অনুরাগীদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণে নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ। স্থানীয়রা নিজেরাই যতটুকু সম্ভব ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বলা যায় যে,শুধু এক জমিদার পরিবার নয়, সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিভূ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

অধিগ্রহন সম্পন্ন না করেই মালিকানা জমিতে সরকারি অফিস নির্মাণ করছে কালীগঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রি অফিস।

সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি: ইতিহাসের গর্ভে হারানো এক রাজকীয় অধ্যায়

আপডেট : ০২:৪৯:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ১নং এস.বি.কে ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদতীরবর্তী গ্রাম সুন্দরপুর। এখানেই অবস্থিত দুই শতাব্দী প্রাচীন এক জমিদার বাড়ি—যা কেবল স্থাপত্যের গৌরব নয়, বরং দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার এক অনন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী।

ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতির ছোঁয়ায় গড়া এই রাজকীয় প্রাসাদটির দৃষ্টিনন্দন বৈঠকখানা, প্রশস্ত উঠান ও সৌকর্যমণ্ডিত কক্ষগুলোর দেয়ালে যেন জমে আছে অতীতের গৌরবগাথা।

১৮৮৬ সালে এই জমিদার বাড়িতেই জন্ম নেন খান সাহেব ফজলুর রহমান চৌধুরী। তাঁর পিতা সুরত আলি চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন অঞ্চলের সুপ্রতিষ্ঠিত জমিদার। কিন্তু ফজলুর রহমান ছিলেন ব্যতিক্রম। জমিদারী ক্ষমতাকে কেবল শাসনের জন্য নয়, উন্নয়ন, শিক্ষা ও কৃষিভিত্তিক শিল্প সম্প্রসারণে কাজে লাগান তিনি। তাঁর এই দৃষ্টান্তমূলক অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৩২ সালে ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল ‘অফ ওয়েলিংটন’ তাঁকে “খান সাহেব” উপাধিতে ভূষিত করেন।

সাম্প্রতিক ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯৪০ সালের ‘পাট বিপ্লবে’ ফজলুর রহমানের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তিনি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের পাট বীজ সরবরাহ ও সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি প্রবর্তন করে বিস্তর প্রশংসা কুড়ান।

জানা যায়, এ বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করেছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও এ কে ফজলুল হকের মতো জাতীয় নেতারাও। শাসন-সভার পথে এসে তাঁদের অবস্থানের স্মৃতিচিহ্ন আজও টিকে আছে কাছারি ঘরের ধূসর দেয়ালে।

সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি শুধু ইতিহাসের ধারক নয়, বরং আঞ্চলিক ঐতিহ্যের এক শক্তিশালী প্রতীক। আজও এই স্থাপনা ইতিহাস-অনুরাগীদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণে নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ। স্থানীয়রা নিজেরাই যতটুকু সম্ভব ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বলা যায় যে,শুধু এক জমিদার পরিবার নয়, সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিভূ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি।