Hi

ঢাকা ১০:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ: ভারতের পার্লামেন্টে মোদিকে তুলাধুনা

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে ভারতের পার্লামেন্টে। সোমবার ও মঙ্গলবার লোকসভা ও রাজ্যসভায় এ নিয়ে সরব হয় বিরোধী দলগুলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযানের সাফল্য তুলে ধরলেও, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসসহ একাধিক রাজনৈতিক দল।

গত এপ্রিলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে এবং আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানায়। এর জেরে গত ৬ মে রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সীমিত সামরিক অভিযান চালায় ভারত। এ অভিযান ঘিরেই শুরু হয় দু’দেশের চারদিনব্যাপী সংঘর্ষ।

এই সংঘর্ষ থামানোর কৃতিত্ব দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে তার মধ্যস্থতাই ভূমিকা রেখেছে। বাণিজ্য আলোচনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তবে ভারতের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে খারিজ করে বিবৃতি দেওয়া হয়।

পাকিস্তান দাবি করে, তারা একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারত এসব দাবি অস্বীকার করে। সংঘর্ষে ভারতের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। এ নিয়েই সংসদে প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বিরোধীদের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় মোদি সরকারের সামরিক পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, অপারেশন সিঁদুর আসলে ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাবমূর্তি রক্ষার প্রচেষ্টা। তিনি দাবি করেন, “পেহেলগামে নিহতদের রক্ত মোদির হাতে লেগে আছে। তাই নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্যই এ অভিযান চালানো হয়েছে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রাত ১টা ৫ মিনিটে অভিযান চালিয়ে ১টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তানকে জানানো হলো—আমরা উত্তেজনা বাড়াতে চাই না! এটা কেমন সামরিক কৌশল?”

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রাহুল বলেন, “ট্রাম্প অন্তত ২৯ বার বলেছেন যে তার হস্তক্ষেপেই যুদ্ধবিরতি হয়। ইন্দিরা গান্ধীর ৫০ শতাংশ সাহস থাকলেও মোদি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলতেন—ট্রাম্প মিথ্যা বলছেন।”

নরেন্দ্র মোদি পার্লামেন্টে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ না করেই বলেন, “বিশ্বের কোনো নেতা ভারতকে অপারেশন থামাতে বলেননি। ৯ মে রাতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, কিন্তু আমি সেনাবাহিনীর বৈঠকে ব্যস্ত ছিলাম। পরে আমি ফোন করলে তিনি বলেন, পাকিস্তান বড় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি তাকে জানাই, পাকিস্তান যদি হামলা করে, তাহলে আমরা গোলায় জবাব দেব।”

তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছি। তবে কংগ্রেস সেই সমর্থন দেয়নি, যা দুঃখজনক।”

তবে মোদির বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় বিরোধী শিবির। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী একবারও ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ করেননি, পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের কথাও বলেননি, এমনকি ভারতের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়েও কিছু জানাননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরতি জেরতের মতে, “বিজেপি শুরু থেকেই অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ জানতে চায়—পাকিস্তানের দাবিগুলো কতটা সত্য? প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসকে আক্রমণ করেই বেশি সময় ব্যয় করেছেন, উত্তর দিয়েছেন কম।”

বিরোধীরা মনে করছেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সরকার যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তা স্বচ্ছ নয় এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ঝিনাইদহে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিতরণে শিক্ষা অফিসারদের চাঁদাবাজী

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ: ভারতের পার্লামেন্টে মোদিকে তুলাধুনা

আপডেট : ০৩:৫২:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে ভারতের পার্লামেন্টে। সোমবার ও মঙ্গলবার লোকসভা ও রাজ্যসভায় এ নিয়ে সরব হয় বিরোধী দলগুলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযানের সাফল্য তুলে ধরলেও, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসসহ একাধিক রাজনৈতিক দল।

গত এপ্রিলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে এবং আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানায়। এর জেরে গত ৬ মে রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সীমিত সামরিক অভিযান চালায় ভারত। এ অভিযান ঘিরেই শুরু হয় দু’দেশের চারদিনব্যাপী সংঘর্ষ।

এই সংঘর্ষ থামানোর কৃতিত্ব দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে তার মধ্যস্থতাই ভূমিকা রেখেছে। বাণিজ্য আলোচনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তবে ভারতের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে খারিজ করে বিবৃতি দেওয়া হয়।

পাকিস্তান দাবি করে, তারা একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারত এসব দাবি অস্বীকার করে। সংঘর্ষে ভারতের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। এ নিয়েই সংসদে প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বিরোধীদের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় মোদি সরকারের সামরিক পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, অপারেশন সিঁদুর আসলে ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাবমূর্তি রক্ষার প্রচেষ্টা। তিনি দাবি করেন, “পেহেলগামে নিহতদের রক্ত মোদির হাতে লেগে আছে। তাই নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্যই এ অভিযান চালানো হয়েছে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রাত ১টা ৫ মিনিটে অভিযান চালিয়ে ১টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তানকে জানানো হলো—আমরা উত্তেজনা বাড়াতে চাই না! এটা কেমন সামরিক কৌশল?”

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রাহুল বলেন, “ট্রাম্প অন্তত ২৯ বার বলেছেন যে তার হস্তক্ষেপেই যুদ্ধবিরতি হয়। ইন্দিরা গান্ধীর ৫০ শতাংশ সাহস থাকলেও মোদি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলতেন—ট্রাম্প মিথ্যা বলছেন।”

নরেন্দ্র মোদি পার্লামেন্টে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ না করেই বলেন, “বিশ্বের কোনো নেতা ভারতকে অপারেশন থামাতে বলেননি। ৯ মে রাতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, কিন্তু আমি সেনাবাহিনীর বৈঠকে ব্যস্ত ছিলাম। পরে আমি ফোন করলে তিনি বলেন, পাকিস্তান বড় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি তাকে জানাই, পাকিস্তান যদি হামলা করে, তাহলে আমরা গোলায় জবাব দেব।”

তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছি। তবে কংগ্রেস সেই সমর্থন দেয়নি, যা দুঃখজনক।”

তবে মোদির বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় বিরোধী শিবির। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী একবারও ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ করেননি, পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের কথাও বলেননি, এমনকি ভারতের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়েও কিছু জানাননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরতি জেরতের মতে, “বিজেপি শুরু থেকেই অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ জানতে চায়—পাকিস্তানের দাবিগুলো কতটা সত্য? প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসকে আক্রমণ করেই বেশি সময় ব্যয় করেছেন, উত্তর দিয়েছেন কম।”

বিরোধীরা মনে করছেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সরকার যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তা স্বচ্ছ নয় এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।