বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী সংগীত পরিবেশক দল ‘কলরব’ এখন আর শুধু সংগীতের নাম নয়, বরং এক করুণ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদ (রহ.)-এর পরিবার অভিযোগ করছে, কলরবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত কোটি টাকার এক দুর্নীতির সাম্রাজ্য। গতকাল রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলেন আজাদের ছেলে গালিব বিন আজাদ।
সংবাদ সম্মেলনে গালিব বলেন, কলরব তার বাবার হৃদয়ের সংগঠন ছিল, যেটি তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন নিষ্ঠা ও শ্রমে। কিন্তু আজ সেই সংগঠনটি বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে পড়ে লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, তার বাবার মৃত্যুর পর মোবাইল ফোনে কলার টিউন ও রিং ব্যাক টিউন হিসেবে কলরবের গজল ব্যবহারে বিপুল অর্থ আয় শুরু হয়, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কাছে সে আয়ের কোনো হিসাব কখনোই আসেনি। বরং কৌশলে সংগঠনের সমস্ত আয় এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন বদরুজ্জামান।
প্রতিষ্ঠানের নামে আসা স্পন্সর, অনুদান, কনটেন্ট আয়ের সমস্ত কিছুই জমা হয় এখন তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ‘হলিটিউন’-এর নামে।
সংবাদ সম্মেলনে গালিব আরো বলেন, আমার স্বামী গালিবসহ আজাদের সন্তানরা এতিম। তারা কলরবের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরি হয়েও কোনো সম্মান, কোনো সুবিধা তো দূরে থাক, বরং সবদিক থেকেই বঞ্চিত। অথচ যারা একসময় অফিস বয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তারা এখন একের পর এক ফ্ল্যাট, গাড়ি, প্রোডাকশন হাউজের মালিক।
সংবাদ সম্মেলনে আজাদের পরিবার দাবি করে, কলরবের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক বদরুজ্জামান এবং প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস শুধু সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ করেননি, বরং প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি, শ্রম ও সুনামকেও ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের পেছনে। সংগঠনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম বদলে ‘হলিটিউন’ করে ফেলা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব শুধু গোপনই নয়, বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্যান্য সদস্যদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে মাসোহারা, উপহার এবং হুমকির মাধ্যমে।
আজাদের পরিবারের ভাষ্য, কলরব প্রতিষ্ঠার সময় যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই আজ সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন, কেউ কেউ চুপ থাকেন নিরুপায় হয়ে। যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা একে একে বহিষ্কৃত হয়েছেন। অথচ সংগঠনের আয় বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানি, কর্পোরেট স্পন্সর, ইউটিউব এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এসব থেকে সংগঠনের তেমন কোনো স্থায়ী সম্পদ তৈরি না হলেও বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠজনরা হয়েছেন কোটি টাকার মালিক।
গালিব বিন আজাদ বলেন, আমরা কলরব চাই না, আমাদের প্রাপ্যটুকু চাই। কলরব আমাদের বাবার রেখে যাওয়া একটি আমানত, সেটিকে লুটেপুটে খাওয়ার অধিকার কারো নেই। সংবাদ সম্মেলনে তারা সংগঠনের সমস্ত আর্থিক হিসাব প্রকাশের দাবি জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত হওয়া দরকার।
প্রতিষ্ঠাতা পরিবার থেকে এমন অভিযোগ প্রথম নয়। তবে এবার তারা পরিবারের সদস্যদের সরাসরি উপস্থিতিতে বিস্তারিত আর্থিক তথ্য তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে রয়েছে কলার টিউন থেকে পাওয়া বিপুল অঙ্কের আয়, ইউটিউব চ্যানেল হস্তান্তর, ফেসবুক কনটেন্ট স্বত্ব, রাজনৈতিক যোগাযোগের সুবিধা ব্যবহার করে সংগঠনের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে আজাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা কারো বিরুদ্ধে বিদ্বেষ নিয়ে আসিনি। কিন্তু বাবার সংগঠন, বাবার স্বপ্নকে ধ্বংস হতে দেখতে পারি না। যারা এই সংগঠনের সুনামকে পুঁজি করে নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, তাদের কাছে অনুরোধ আজাদের পরিবারের হক ফিরিয়ে দিন।
অভিযুক্তদের বক্তব্যের জন্য একাধিকবার মুঠোফোন চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। কোনো। তবে তারা অতীতেও এসব অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করে আসছেন।