Hi

ঢাকা ১০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে নদী ও খাল-বিলে অবৈধ চায়না দুয়ারি জালে সয়লাব, হুমকির মুখে দেশীয় প্রজাতির মাছ

filter: 0; jpegRotation: 0; fileterIntensity: 0.000000; filterMask: 0; module:1facing:0; hw-remosaic: 0; touch: (-1.0, -1.0); modeInfo: ; sceneMode: Auto; cct_value: 0; AI_Scene: (-1, -1); aec_lux: 0.0; hist255: 0.0; hist252~255: 0.0; hist0~15: 0.0;

বর্ষায় চারদিকে থই থই করছে পানি। মাঠ-ঘাট, বিল-বাওড় ডুবে একাকার। ভেসে গেছে চাষের পুকুরের ছোট পোনাসহ রেণু মাছও। এসব মাছ ধরতেই এক শ্রেণির মানুষ ব্যবহার করছে জলজ পরিবেশ বিধ্বংসী চায়না দুয়ারি জাল।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নদী, খাল-বিলে এখন চায়না দুয়ারি, কারেন্ট জাল বা ফাঁস জালে সয়লাব। এই চায়না দুয়ারি বা কারেন্ট জাল বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না কেউই। উপজেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব জাল।
এসব প্রতিরোধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের বারবার অভিযানে জাল আটক, মামলা ও জরিমানা আদায় করলেও তা পুনরায় বিক্রি বা ব্যবহার যেন কমছেই না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাছ ধরায় ব্যবহৃত কারেন্ট জালের থেকেও ভয়ংকর চায়না দুয়ারি জাল। এই জালে রেণু পোনা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব রকম সাইজের মাছ ধরা পড়ে। এমনকি এ জালে জলজ প্রাণীসহ কীট-পতঙ্গও রেহাই পায় না। বিশেষ করে দেশি প্রজাতির মাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই জাল।
গ্রামাঞ্চলের লোকজন না জেনে বা না বুঝেই এই জাল ব্যবহার করায় দেশীয় প্রজাতির মৎস্য ভাণ্ডারের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ৫০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা চায়না দুয়ারি এই জালগুলো মিহি ও পাতলা হওয়ায় তা খুব সহজেই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। একেবারে মিহি বুননের ছোট ফাঁসবিশিষ্ট এই জালটি কপাটের মতো কাজ করে।
নদীতে বাঁশের লাঠির সাথে বেঁধে পাতা হয় ফাঁদ। এতে ছোট ছোট রেণু পোনা, এমনকি মাছের ডিমও জালে আটকে পড়ে।
এখন ভরা বর্ষা মৌসুম। এবারে লাগাতার ভারী বর্ষণে কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় সব খাল-বিল-পুকুর পানিতে টইটুম্বুর। সরেজমিনে ওইসব অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি স্থানেই কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরার উৎসব চলছে।
উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা ও বেগবতী নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিলে চায়না দুয়ারি জালে এখন সয়লাব। উপজেলার মধ্যে অন্যতম নাটোপাড়া বিলটি বেশ বড় এবং মাছের জন্য বিখ্যাত।
এবারের বর্ষায় এ বিলে পানি বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে রেণু চারা পোনা, পুঁটি, কই, টেংরা, টাকি ও শিং-মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মাছগুলো ২/১ মাসের ব্যবধানে বড় হবে। কিন্তু এক শ্রেণির মাছ শিকারি ওই বিলে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে উঠেছে। তারা অবৈধ জাল পেতে বিল, নদী ও খাল থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করছে।
বিল-সংলগ্ন বাসিন্দা ইয়াকুব আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতিনিয়ত কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ শিকারের ফলে অল্প দিনেই এ বিলে আর দেশীয় মাছ পাওয়া যাবে না।
তারা জানান, কালীগঞ্জ শহরের বড় বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় এই সব অবৈধ জাল বিক্রি করে থাকেন। এটি বিক্রি বন্ধ না করা গেলে অচিরেই মাছের বংশ ধ্বংস হবে বলে তাঁদের অভিমত।
নাটোপাড়া গ্রামের ইমন হোসেন বলেন, এখন দেশীয় প্রজাতির প্রায় সব মাছের পেটে ডিম রয়েছে। বিলে ও নদীতে কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা দেশি মাছ আটকা পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশি মাছের বংশ বিস্তার হবে না। এজন্য কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল বিক্রি ও ব্যবহারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসব প্রতিরোধে কালীগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, অবৈধ কারেন্ট জাল আটকে আমাদের অভিযান কার্যক্রম চলমান আছে। তবে জনবল সংকটের কারণে সবসময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।
তারপরও নির্দিষ্ট তথ্য পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন আলম বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত উপজেলা মৎস্য অফিসকে সাথে নিয়ে শহরের বিভিন্ন বাজার ও নদীতে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। একাধিকবার অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ কারেন্ট জাল আটক ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে ওইসব জাল বিক্রির চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তিনি বলেন, অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রি ও ব্যবহারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমানে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জনপ্রিয়

ঝিনাইদহে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিতরণে শিক্ষা অফিসারদের চাঁদাবাজী

কালীগঞ্জে নদী ও খাল-বিলে অবৈধ চায়না দুয়ারি জালে সয়লাব, হুমকির মুখে দেশীয় প্রজাতির মাছ

আপডেট : ০৬:৪২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

বর্ষায় চারদিকে থই থই করছে পানি। মাঠ-ঘাট, বিল-বাওড় ডুবে একাকার। ভেসে গেছে চাষের পুকুরের ছোট পোনাসহ রেণু মাছও। এসব মাছ ধরতেই এক শ্রেণির মানুষ ব্যবহার করছে জলজ পরিবেশ বিধ্বংসী চায়না দুয়ারি জাল।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নদী, খাল-বিলে এখন চায়না দুয়ারি, কারেন্ট জাল বা ফাঁস জালে সয়লাব। এই চায়না দুয়ারি বা কারেন্ট জাল বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না কেউই। উপজেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব জাল।
এসব প্রতিরোধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের বারবার অভিযানে জাল আটক, মামলা ও জরিমানা আদায় করলেও তা পুনরায় বিক্রি বা ব্যবহার যেন কমছেই না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাছ ধরায় ব্যবহৃত কারেন্ট জালের থেকেও ভয়ংকর চায়না দুয়ারি জাল। এই জালে রেণু পোনা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব রকম সাইজের মাছ ধরা পড়ে। এমনকি এ জালে জলজ প্রাণীসহ কীট-পতঙ্গও রেহাই পায় না। বিশেষ করে দেশি প্রজাতির মাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই জাল।
গ্রামাঞ্চলের লোকজন না জেনে বা না বুঝেই এই জাল ব্যবহার করায় দেশীয় প্রজাতির মৎস্য ভাণ্ডারের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ৫০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা চায়না দুয়ারি এই জালগুলো মিহি ও পাতলা হওয়ায় তা খুব সহজেই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। একেবারে মিহি বুননের ছোট ফাঁসবিশিষ্ট এই জালটি কপাটের মতো কাজ করে।
নদীতে বাঁশের লাঠির সাথে বেঁধে পাতা হয় ফাঁদ। এতে ছোট ছোট রেণু পোনা, এমনকি মাছের ডিমও জালে আটকে পড়ে।
এখন ভরা বর্ষা মৌসুম। এবারে লাগাতার ভারী বর্ষণে কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় সব খাল-বিল-পুকুর পানিতে টইটুম্বুর। সরেজমিনে ওইসব অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি স্থানেই কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরার উৎসব চলছে।
উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা ও বেগবতী নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিলে চায়না দুয়ারি জালে এখন সয়লাব। উপজেলার মধ্যে অন্যতম নাটোপাড়া বিলটি বেশ বড় এবং মাছের জন্য বিখ্যাত।
এবারের বর্ষায় এ বিলে পানি বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে রেণু চারা পোনা, পুঁটি, কই, টেংরা, টাকি ও শিং-মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মাছগুলো ২/১ মাসের ব্যবধানে বড় হবে। কিন্তু এক শ্রেণির মাছ শিকারি ওই বিলে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে উঠেছে। তারা অবৈধ জাল পেতে বিল, নদী ও খাল থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করছে।
বিল-সংলগ্ন বাসিন্দা ইয়াকুব আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতিনিয়ত কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ শিকারের ফলে অল্প দিনেই এ বিলে আর দেশীয় মাছ পাওয়া যাবে না।
তারা জানান, কালীগঞ্জ শহরের বড় বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় এই সব অবৈধ জাল বিক্রি করে থাকেন। এটি বিক্রি বন্ধ না করা গেলে অচিরেই মাছের বংশ ধ্বংস হবে বলে তাঁদের অভিমত।
নাটোপাড়া গ্রামের ইমন হোসেন বলেন, এখন দেশীয় প্রজাতির প্রায় সব মাছের পেটে ডিম রয়েছে। বিলে ও নদীতে কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা দেশি মাছ আটকা পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশি মাছের বংশ বিস্তার হবে না। এজন্য কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল বিক্রি ও ব্যবহারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসব প্রতিরোধে কালীগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, অবৈধ কারেন্ট জাল আটকে আমাদের অভিযান কার্যক্রম চলমান আছে। তবে জনবল সংকটের কারণে সবসময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।
তারপরও নির্দিষ্ট তথ্য পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন আলম বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত উপজেলা মৎস্য অফিসকে সাথে নিয়ে শহরের বিভিন্ন বাজার ও নদীতে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। একাধিকবার অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ কারেন্ট জাল আটক ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে ওইসব জাল বিক্রির চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তিনি বলেন, অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রি ও ব্যবহারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমানে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।